নিজম্ব প্রতিবেদক::অফিস সহকারী কর্তৃক প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সিলেটের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে তোলপাড় চলছে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এরই মধ্যে চাকুরি হতে বরখাস্ত হয়েছেন সিলেট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ওই অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক নজরুল ইসলাম। সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়ার পথে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা তাকে আটক করেছে।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িয়ে পড়েন অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম। সরকারি বরাদ্দসহ বিভিন্ন ফান্ডের টাকা উত্তোলন করেন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরে। অফিসের রেকর্ড ক্লিপিং করতেও অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি। এক পর্যায়ে বিষয়টি টের পান সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা। এমনকি তার দেশত্যাগের পায়তারাঁর বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্ট বিভাগের। যার প্রেক্ষিতে সিলেট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে বিমানবন্দর এপিবিএনকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়।
সূত্র মতে, অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হলে তদন্তের নির্দেশ দেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক কুতুব উদ্দিন আহমদ। এ লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাককে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, বালাগঞ্জ উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফসি) ডা. হামিদা বেগম এবং বিয়ানীবাজার উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফসি) ডা. জাহিদ হোসেন। তদন্তদল গত ১৪ নভেম্বর তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২ ডিসেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হাতে তুলে দেয়া হয় প্রতিবেদনের কপি। যার প্রেক্ষিতে পরদিন ৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) ও অতিরিক্ত সচিব মো. হেমায়েৎ হুসেন এক আদেশে নজরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এ আদেশে বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকৃত ব্যক্তি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক সিলেটের ডাককে জানান, নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি যাচাই বাছাই করে প্রাথমিকভাবে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অর্থ আত্মসাত ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অফিসের রেকর্ড ক্লিপিংএ অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে বলে জানান তিনি।
বিমানবন্দর আমর্ড পুলিশের কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খানের পাঠানো এক পত্রে বলা হয়েছে, গত ২৭ নভেম্বর বিকেলে বিমানবন্দরের কার পার্কিং এলাকা থেকে নজরুল ইসলামকে (৪৭) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় তাকে তল্লাশি করে ১ হাজার সৌদি রিয়াল, ৪৫০ দিরহাম এবং ৭ হাজার ৯০০ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। কিন্তু তার পাসপোর্টে (ঊঊ-০৪৩৮০০৬) ১ হাজার ডলার এনডোর্স করা ছিল। অতিরিক্ত ডলার এবং অর্থের বিষয়ে কোন সদুত্তরও দিতে পারেননি তিনি। যে কারণে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানায় মামলা নং-৪১ (২৭/১১/২০১৯) দায়ের করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক ডা. লুৎফুন্নাহার জেসমিন জানান, তার বরখাস্তের আদেশ কপি পেয়ে ৫ ডিসেম্বর পিয়ন বুকের মাধ্যমে তা তার বাড়ীতে পাঠানো হয়েছে। আদেশের কপি তার স্ত্রী গ্রহণ করেছেন বলেও জানান তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (যুগ্ম সচিব) কুতুব উদ্দিন জানান, অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে এটি বিভাগীয় ব্যবস্থা। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্য একটি সূত্র জানায়, এত বিপুল অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম সিলেট শহরতলীর শাহপরান থানাধীন বাহুবল গ্রামের আব্দুল মোছব্বিরের পুত্র।